উপাসনার গুণ কি?
What is the quality of worship?
চলতি ভাষায়-
প্রেমভক্তি- প্রভৃতীনাং গুণানাং বৃদ্ধি-কারিণী। আত্মপ্রসাদ জননী দেব ভাবস্য সাধিনী। স্থূলদেহ-ভৃতাং নিত্যং জন্মসার্থক্যদায়িনী। পন্থা মহান্ বিভু -প্রাপ্তেঃ কীর্ত্তিতৈব মুপাসনা।।
অর্থাৎ উপাসনা প্রেমভক্তি প্রভৃতি গুণের বৃদ্ধি কারিণী, আত্মপ্রসাদ জননী, দেব ভাবের সাধিনী, পার্থিব(স্থূল)দেহধারণ করে যারা আছে তাদের পক্ষে সর্বসময় জন্মসার্থক প্রদানকারিনী কেননা প্রেম কোমল রূপ তাই জননী শব্দ ব্যবহার হয়েছে। এবং জগদীশ্বর কে পাওয়ার মহান পথ। অন্য জায়গায় লেখা আছে -
মনুষ্যত্বস্য জননী পশুত্বস্যচ নাশিনী ! আত্মপ্রসাদমাধুর্য্য জ্ঞাপনী পাপ মোচনী। সাধনী জ্ঞান দার্ঢ্যানাং বলশান্তিবিধায়িনী। এবং সর্ব্বগুণোপেতা সুক্ষভাবস্য ধারিণী।।
অর্থাৎ উপাসনা করলে মানুষের মধ্যে যে পশুভাব থাকে তা নাশ হয় ও মনুষ্যত্বের বিকাশ হয়। উপাসনা দ্বারা পাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং আত্মপ্রসাদের মধুরতা জানতে পারা যায়। উপাসনায় জ্ঞানের ও দৃঢ়তার সাধনা হয়(জ্ঞানের প্রাদুর্ভাব হয়) এবং ঐভাবে হৃদয়ে বল ও শান্তি প্রাপ্ত হওয়া যাই। এই উপাসনা দ্বারা সুক্ষ্ম ভাব ধারণা করা যায়। চক্ষু ,কর্ণ ইত্যাদি যা ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বোঝা যায় না তা জানা যায়। এবিষয়ে অনেক কি বলব?উপাসনার গুণ এতই বেশি যে , বর্ণনা করে শেষ করা যায় না।এ কারণেই সত্যধর্ম্ম-গ্রন্থে লেখা হয়েছে যে, "দেখ, উপাসনা জীবনের অত্যন্ত গুরুতর প্রয়োজনীয় বিষয়। উপাসনা ব্যতীত সত্যধর্ম্ম- পথে অবস্থানের উপায় নেই। যে ব্যক্তি উপাসনা করে না তার পাপ জীবন পশুভাব বিহীন হয় কখনও প্রকৃত মনুষ্যত্ব প্রাপ্ত হওয়া যায় না। যে ব্যক্তি উপাসনা করে না, সে পাপ মুক্তির পরে সুন্দর আত্ম প্রসাদ কি মধুময়-কি অমৃতময় পদার্থ, তা জানতে পারেনি, যে ব্যক্তি উপাসনা করেনি। তার মন কখনো দৃঢ় হয় নি, যে উপাসনা করে না, সূক্ষ্ম জগতের কথা দূরে থাকুক, সে পার্থিব(স্থূল) জগতের সুক্ষ্ম ভাব ও জানতে পারে নি। এবং যে উপাসনা করে না তার আত্মা নিস্তেজ ভাবে থাকে ইত্যাদি। অতএব উপাসনাই বল, উপাসনাই শান্তি। যে এমন ধনে বঞ্চিত, সে যে ধর্ম্মচ্যুত হবে তাতে আর সন্দেহ কি?"
পূর্বে আছে যে, প্রার্থনা ও উপাসনার অঙ্গ বিশেষ । অতএব এখানে যেমন সাধারণভাবে উপাসনার ফলের উল্লেখ করা আছে,তদ্রূপ বিশেষ ভাবে প্রার্থনার ফলের ও নির্দেশ ও আবশ্যক। পাপ হতে মুক্তি এবং মনের দৃঢ়তা অর্থাৎ লোভে লোভিত হয়ে পাপ কাজে লিপ্ত না হওয়া ও পাপকর কাজ চিন্তায় মন না যাওয়া প্রভৃতি প্রার্থনার ফল।
এখানে অবশ্য বক্তব্য যে, গুণ লাভ যখন উপাসনার ফল বলে পরিগণিত তখন গুণের জন্য অন্যান্য অতি উচ্চ অবস্থা ও উপাসনার ফলের অন্তগত অর্থাৎ বিভূতি,(অলৌকিক) সিদ্ধি(ফল) ,অষ্টপাশ (কাম, ক্রোধ,লোভ ,মোহ,মদ্(অহংকার) ,মাৎসর্য্য লজ্জা,ভয়,কূল,শীল,জাতি)থেকে মুক্তি। লয়শীল ,গুন সমূহের লয় এবং ধ্যানমগ্ন অবস্থায় দেব দেবীর দর্শন ,দেবতাদের সঙ্গে কথোপকথন, ব্রহ্ম তেজো দর্শন,(ব্রহ্ম জ্যোতিদর্শন), ব্রহ্ম দর্শন প্রভৃতি ও উপাসনার ফল বলা যেতে পারে। কিন্তু ঐ সকল বিষয় তত্ত্বজ্ঞানের প্রথম খণ্ডে উপাসনা অংশে নির্দিষ্ট হবে না। ঐ গুলি এই গ্রন্থের দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডে অর্থাৎ'সাধনা'ও সিদ্ধি প্রকরণে বর্ণিত হবে।
0 Comments